দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো জানা উচিত
- আমাদের মধ্যেই অনেকেই আছেন সামান্য কারনেই প্রায় অসুস্থ হন।হঠাৎ,আবহাওয়া বদল হল অসুস্থ হয়ে গেলেন কিছু সময় রোদে গেলেন তো শুরু হল মাথা ব্যথা অথবা সামান্য বৃষ্টি গায়ে লাগলো তো শুরু হল ঠান্ডা,কাশি কিংবা
জ্বর। - আবার কেউ কেউ আছেন রোদ,বৃষ্টি কিংবা ঝড় কোন কিছুতেই তার শারীরিক কোন সমস্যা নেই।দিব্যি সুস্থ আছেন।
- এই যে আমরা সুস্থ আছি কিংবা প্রায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি এর মূল কারন হল আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার কত ভাল কিংবা কার কত দূর্বল তার উপর নির্ভরশীল।
- যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম তারা প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
- আমাদের প্রায় ৮০ ধরনের রোগ ব্যাধি হয় কেবল মাত্র ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার কারনে।
- আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হল কোষ,টিস্যু এবং অর্গানের গুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল ম্যাট্রিক্স যা অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার জন্য একসাথে কাজ করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত এবং বংশগত।অর্থাৎ,বিষয়টি একজন মায়ের গর্ভে থাকাকালীন কতটা পুষ্টি পেয়েছেন এবং বংশানুক্রমে তিনি কতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়েছেন তার উপর অনেকটা নির্ভর করে।
- তবে,বিষয়টি এমন নয় যে একজন গর্ভাবস্থায় ভাল পুষ্টি পেয়েছেন বলে তাকে পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আর কোন প্রচেষ্টার দরকার নেই।
- একজন মানুষ নানাভাবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত কিছু প্রচেষ্টা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে দেহে এন্টিবডির পরিমান বাড়াতে হবে।আর এই জন্য নিয়মিত প্রথম শ্রেণীর আমিষ জাতীয় খাবার অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম,দুধ,দই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।আর,এই এন্টিবডিকে কার্যকর করতে প্রয়োজন এন্টিঅক্সিডেন্টের।খুব সহজেই এবং কম খরচে যদি আমরা এন্টিঅক্সিডেন্টে পেতে চাই তবে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ফল এবং শাকসব্জি রাখতে হবে।
- এরপর,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের।কারণ,প্রায় ৭০% প্রতিরক্ষা কোষ অন্ত্রের দেয়ালে বসবাস করে।সুতরাং,বলা বাহুল্য যে আমাদের শারীরিক কার্যকারীতার চাবী কাঠি হল আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং লিম্ফ্যাটিক তরল প্রবাহকে উন্নত করতে সহায়তা করে। লিম্ফ্যাটিক তরল কোষ এবং টিস্যুর মধ্য দিয়ে ভ্রমন করার সময় টক্সিন,বর্জ্য এমনকি ক্যান্সার সেল গুলোকেও অপসারন করে।ফলে,আমাদের দেহ থাকে রোগ মুক্ত।
- আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ভাল মানের ঘুমের।কারণ,অপর্যাপ্ত ঘুমের কারনে আমাদের বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- এছাড়া, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যেন আমাদের দেহের ভিটামিন এবং মিনারেলস প্রোফাইল ঠিক থাকে।বিশেষ করে ভিটামিন-ডি এর লেভেল।কারন,যাদের দেহে ভিটামিন-ডি অপর্যাপ্ত তারা খুব সহজেই ঠাণ্ডা বা ফ্লূতে আক্রান্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।তাই,ভিটামিন-ডি এর লেভেল ঠিক রাখতে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সময় রোদে কাটানো উচিত।
- পাশাপাশি,আয়রন,জিংক,ভিটামিন-সি,কপার এবং সেলেনিয়াম ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ন।তাই,দেহে এই উপাদান গুলোর যাতে ঘাটতি না হয় সেজন্য প্রয়োজন পড়লে খাবারের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট ও নেয়া উচিত।
লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড
Category : Health, Food and Nutrition, Diseases
Published By Achia Pervin Ali Shampa
Published On July, 12 2020 @ 21:09
Comments Area