জামের নানাবিধ পুষ্টি গুন
শীতকাল যদি শাক সব্জির জন্য অতুলনীয় হয় তবে গ্রীষ্মকাল নানা রকম পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফলের জন্য অসাধারণ একটা ঋতু।
- আর,এ সময়ে যেসব ফল পাওয়া যায় তা যেমন গরম কালের নানা রোগ যেমনঃসাধারণ সর্দি-জ্বর,কাশি কিংবা ঠান্ডা লাগার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তেমনি খুব অল্প দামে নানা রকম অপুষ্টি যেমনঃ এনিমিয়া,ভিটামিন-এ বা সি অভাব জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- তবে,আজ বলবো,অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল জামের নানা গুন।জামে শর্করা রয়েছ ১৬.১৬%,ভিটামিন-সি ,২১%, ম্যাগনেশিয়াম ৪.৭৬%,ভিটামিন-বি৬ রয়েছে ৩.৯২% ফসফরাস রয়েছে ৩.২৯% এছাড়া,আয়রন,ভিটামিন-ই এবং অন্যান্য ফাইটোকেমিক্যালস এবং ফাইবার তো রয়েছে।
- জাম গ্রীষ্মকালে খুব অল্প দিনের জন্য পাওয়া যায়।জাম এমন একটি ফল যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, হিমোগ্লোবিন বাড়াতে,এনিমিয়া দূর করতে স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে,হজমের সমস্যা কিংবা আলসারের ক্ষত দূর করতে কিংবা ব্রেনের কার্যকরীতা বাড়াতে ভীষণ উপকারী।
- যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং ফল খেতে ভয় পান তারা নিশ্চিন্তে জাম খেতে পারেন।জাম রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।জামে এক ধরনের কম্পাউন্ড বা উপাদান ডিএন জে বা ১- ডিঅক্সিনোরজিমাইসিন আমাদের গাটে থাকা এনজাইম যা শর্করা ব্রেক ডাউন করতে পারে তাকে বাধা প্রদান করে।যার,ফলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- জামে থাকা অ্যানথোসায়ানিন খারাপ কোলেস্টেরল এল ডি এলের পরিমাণ কমাতে সাহয্য করে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশ হ্রাস পায়।
- জামে প্রচুর পরিমানে ক্লোরোজেনিক এসিড রয়েছে যা একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট।আমাদের দেহ কোষ গুলোকে সুরক্ষার জন্য এই ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট খুবি কার্যকর।
- জামে থাকা ভিটামিন-ই অক্সিডেটিভ ড্যামেজ হ্রাস করার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- জামে বেশ ভাল পরিমানে ফাইবার রয়েছে।আমরা জানি,সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন ২৫-৩৫ গ্রাম ফাইবার বা খাদ্যআঁশ গ্রহণ করা উচিত।ফাইবার বা খাদ্য আশ আমাদের ডাইজেস্টিভ হেলথের জন্য ভীষণ উপকারী।যারা,প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাতে ভুগছেন কিংবা যাদের হজমের গন্ডগোল রয়েছে তারা নিয়মিত জাম খেতে পারেন।
- আমাদের দেশে আয়রনের অভাব জনিত সমস্যাতে প্রায় প্রতিটি নারী,শিশু এমনকি পুরুষেরা ও ভুগে থাকেন।যাদের,দেহে আয়রনের অভাব রয়েছে তারা এসময়ে নিয়মিত জাম খেতে পারেন।আয়রনের,অভাব জনিত সমস্যা অনেকাংশ দূর হবে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন পুষ্টি উপাদান হল ভিটামিন-সি।অনেকেই কোভিড-আতংকে বর্তমানে ভিটামিন-সি এর সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন আবার অনেকেই হতাশ হচ্ছেন -সি এর সাপ্লিমেন্ট পাচ্ছেন না বলে।তাদেরকে বলছি,যে কয়দিন বাজারে জাম পাওয়া যায় জাম খেতে থাকুন আর প্রতিদিনের ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরন করুন।
- শুধু তাই নয় জাম ডিএন এ ড্যামেজের বিরুদ্ধে এবং ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে কিংবা খাবারের রুচি বাড়াতে জাম বা জামের জুস দিতে পারেন।এতে করে শিশুদের খাবার খাওয়া প্রতি রুচি বৃদ্ধি পাবে একি সাথে অপুষ্টি ও দূর হবে।
- সাবধানতাঃ জামের তেমন কোন অপকারীতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।তবে,প্রয়োজনের অতিরিক্ত জাম খেলে বদ হজম বা গ্যাস্টিক হতে পারে।মনে,রাখতে হবে সারাদিনে আমাদের ৪ সার্ভিং বা ২ কাপ ফল খাওয়া উচিত।এর চেয়ে খুব বেশি বা কম ফল গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
Category : Health, Food and Nutrition, Diseases
Published By Achia Pervin Ali Shampa
Published On June, 28 2020 @ 21:21
Comments Area