করোনা কালীন সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের করনীয়।।।।
- করোনাতে সাধারণ মানুষের চাইতে যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোন ক্রনিক রোগ রয়েছে তাদের করোনাতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যেমন বেশি তেমনি আক্রান্ত হলে অন্যান্য জটিলতা ও অনেক বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
- এই বিষয়টি মাথায় রেখে বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
- করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় এমনিতেই মানুষ আতংকিত।তবে,বর্তমানে করোনা আতংকে এমন যেন না হয় যে করোনার টেনশনে অন্য রোগ গুলো বেড়ে গেছে।
- বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের বর্তমানে কি অবস্থা তা ভালভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত।
- মনে রাখতে হবে,দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে তা চোখ থেকে শুরু করে কিডনি,নার্ভ, লান এবং হার্টের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
- যেহেতু,বর্তমান সময়ে আমাদের জীবন যাপনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের নিজের প্রতি এসময়ে একটু বাড়তি যত্ন নেয়া উচিত।
- সপ্তাহে অন্তত ২ দিন বাড়িতে বসে সকালে খালি পেটে, নাস্তা খাওয়া, দুপুরের খাওয়া এবং রাতে খাওয়ার ২ ঘন্টা পর রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা উচিত।পর পর কয়েক সপ্তাহের গ্লুকোজ রিডিং দেখলে অনেকটাই বোঝা যাবে যে ডায়াবেটিস কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে কিংবা কতটা অনিয়ন্ত্রিত।
- শুধু রক্তের শর্করা নয় সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্লাড প্রেসার ও মাপা উচিত।কারন,যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা ও অনেক বেশি থাকে।
- যারা,অনেক দিন ধরে কোন ধরনের মেডিকেল টেস্ট করেননি বিশেষ করে A1C,ক্রিয়েটিনিন,ইউরিক এসিড কিংবা লিপিড প্রোফাইল, তারা বর্তমান সময়ে এই টেস্ট গুলো করিয়ে নিতে পারেন।
- এতে করে,কোন মেডিসিন কিংবা ইনসুলিন ডোজ বাড়াতে কিংবা কমাতে হয় কিনা তা বোঝা যাবে। শুধু তাই নয় শরীরে অন্য কোন ব্যাধি জেকে বসেছে কিনা সেটা ও জানা যাবে।বর্তমানে,অনেক হসপিটাল রয়েছে যারা বাড়িতে এসে রক্তের স্যাম্পল নিয়ে যায়।সুতরাং,আপনার সুবিধা মত বাড়িতে বসেই স্যাম্পল দিতে পারবেন।
- এরপর,যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা।
- সেটি নিয়মিত ব্যায়াম করা থেকে শুরু করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া,সময় মত খাওয়া দাওয়া করা রাতে অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের চেষ্টা করা সহ প্রতিটি বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকাতে যথাসম্ভব হাই জি আই ফুডের পরিবর্তে মিডিয়ায় এবং লো জি আই ফুড অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।অথবা,হাই জি আই,মিডিয়ায় জি আই এবং লো জি আই খাবার এমন ভাবে কম্বিনেশন করতে হবে যাতে করে রক্তের শর্করার উপর তেমন প্রভাব না পড়ে।অর্থাৎ,হাইপো কিংবা হাইপার গ্লাইসেমিয়া না হয়।
- সেজন্য,খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার অর্থাৎ,ভাত, রুটি,আলু পরিমিত পরিমানে রাখতে হবে।বেশি পরিমানে শাক এবং সব্জি রাখতে হবে বাকিটা আমিষ জাতীয় খাবার যেমনঃডাল,মাছ অথবা মাংস রাখতে হবে।কারন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক পরিমানে অথচ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ অপরিহার্য।
- এসময়,খাদ্য তালিকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন খাবার যেমনঃ রসুন ভর্তা,কালো জিরা ভর্তা,কাঠ বাদাম,টক ফল,অন্তত ১ কাপ গ্রিন টি এবং শাক সব্জি নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- এরপর,ডায়াবেটিস রোগীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শারীরিক ভাবে কর্মক্ষম থাকা।কারণ,যারা যত বেশি এক্টিভ তাদের ইন্সুলিনের কার্যকরীতা তত ভাল। তাই, প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০-৪৫ মিনিট হাটা,ইয়োগা বা ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন।তবে,বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরে নয় ঘরে বসেই ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে তা হল পা এবং দাতের যত্ন নেয়া।কারণ,ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কেবল পরিস্কার পরিছন্নতা যত্ন এবং সচেতনতার অভাবে অনেকেই পা এবং দাতের নানা সমস্যাতে ভুগে থাকেন।তাই,নিজের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হোন।
পাশাপাশি,পুনরায় মনে করিয়ে দিতে চাই সামাজিক দুরত্ব এবং পরিস্কার পরিছন্নতা বজায় রাখুন,কিছুক্ষণ পর পর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন,ভীড় এড়িয়ে চলুন এবং বাইরে থেকে ফিরে কুসুম গরম পানি এবং সাবান দিয়ে গোসল করুন।
লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা পুষ্টিবিদ,বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড
Category : Health, Food and Nutrition, Diseases
Published By Achia Pervin Ali Shampa
Published On June, 21 2020 @ 20:07
Comments Area