একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সারাদিনের খাদ্য তালিকা যেমন হওয়া উচি।
একথা আমরা সবাই জানি,যে করোনা ভাইরাসের জন্য কোন বিশেষ চিকিৎসা,মেডিসিন কিংবা ভ্যাক্সিন নেই আবার এমন কোন খাবার বা পথ্য নেই যে খাবারটি গ্রহণ করলে রাতারাতি করোনা দূর হয়ে যাবে।পরিস্থিতি,যখন এমন তখন আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস।
♦ একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত সুস্থতার জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে।আর,এজন্য অবশ্যয় এমন সব খাবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে দিতে হবে যাতে সঠিক ভাবে পুষ্টি চাহিদা পূরন করার পাশাপাশি তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
♦ একজন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হবার পর নানা ধরনের উপসর্গে ভুগতে পারেন।সাধারণ সমস্যার মধ্যে ডায়রিয়া, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য মুখের ভেতর ঘা,ঘুম এবং মানসিক সমস্যা এবং তীব্র সমস্যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, অর্গান ফেইলিউর বা আরো অনেক ধরনের জটিলতা ।তবে, যাদের দেহের ইমিউনিটি স্টং তাদের ক্ষেত্রে সারভাইভাল রেট তুলনামূলক বেশি।
♦ এসময় আক্রান্ত ব্যক্তির খাবারে হাই প্রোটিন ডায়েট পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, সেলেনিয়াম,জিংক,ভিটামিন-ডি এবং ফাইবার যদি রাখা যায় তবে দ্রুত রোগের ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।এছাড়া, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল যথাযথ হাইড্রেশন। পাশাপাশি,চিনি,লবণ এবং ফ্যাটের পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।
♦ অসুস্থ অবস্থায় রোগীর খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকলে যেকোন রোগ থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।আর,প্রোটিন চাহিদা পূরনের জন্য ডাল, ডিম, দুধ, দই, মাছ,সাদা মাংস খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রাখা উচিত।
♦ তবে,প্রোটিনের চাহিদা পূরনের জন্য এমন নয় যে কেবল প্রতিবেলায় মাছ বা মাংসই খেতে হবে।ডাল এবং ডিম থেকেও ভাল পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া সম্ভব।তবে, যাদের সুযোগ এবং সামর্থ্য রয়েছে রয়েছে তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ২-৩ টুকরো মাছ বা মাংস, ডাল,৬০০ মিঃলি দুধ এবং একটি ডিম রাখতে পারেন।
♦ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, এসময় প্রতিদিনের ফাইবারের চাহিদা পূরনের জন্য অন্তত ৫ সার্ভিং বা আড়াই কাপ শাক অথবা সব্জি খেতে হবে এবং ৪ সার্ভিং ফল বা দুই কাপ ফল খেতে হবে।
শাকসবজি এবং ফল যে কেবল ফাইবারের চাহিদা পূরন করে তা নয়,আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা আমাদেরকে দেহে
♦ শাকের মধ্যে পালংশাক, পুইশাক, কলমি, হেলেঞ্চা, লালশাক,লাউশাক,কুমড়া,কচুশাক,লেটুস,ধনিয়াপাতা যেকোন একটি কিংবা মিক্স শাক খেতে হবে। সব্জির মধ্য ঢ্যাঁড়স,করলা,ঝিংগা,কাকরোল,মিষ্টি কুমড়া,পটল,লাউ, চিচিংগা বা এসময় বাজারে যেসব সব্জি পাওয়া যায় সেগুলো বেছে নিতে পারেন।
♦ ফলের মধ্যে যে ফল গুলোতে ভিটামিন-সি রয়েছে সেগুলো বেশি পরিমানে খেতে হবে।যেন দৈনিক ভিটামিন-সি এর চাহিদা যথাযথ ভাবে পূরন হয়।সেজন্য যেকোন টক ফল অন্তত ১৫০ গ্রাম গ্রহণ করা উচিত।তবে,সেটি অবশ্যয় লবণ ছাড়া খেতে হবে। আমড়া,জাম, আমলকি,পেয়ারা,আনারস,জাম্বুরা,মাল্টা,লটকন,কাচা আম,এই টক ফলের পাশাপাশাপাশি, মিষ্টি ফল তরমুজ, পেপে,পাকা আম,কলা,লিচু পরিমিতভাবে গ্রহন করতে হবে।
♦ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে মানুষ অতিরিক্ত পরিছন্নতা বজায় রাখতে গিয়ে জীবানু মূক্ত করার উপায় হিসাবে ফল বা সব্জিকে ব্লিচিং পাউডার,স্যাভলন,লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ কিংবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধূয়ে ফেলছেন,যা,হেলথের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
♦ ফল বা সব্জি থেকে প্রিজারভেটিভ,কেমিক্যাল কিংবা জীবানু মূক্ত করতে চাইলে কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে,কিংবা প্রতি লিটার পানিতে ২০-২৫ এম এল ভিনেগার কিংবা ১৪ গ্রাম বেকিং সোডা মিশিয়ে অন্তত ২০-২৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ট্যাপের রানিং ওয়াটারে ধুয়ে নেয়া যেতে পারে।
♦ এবার আসি অন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যেমন খাবারে জিংক পেতে হলে বাদাম,মাশরুম,অংকুরিত ছোলা,পালংশাক,ব্রকলি,বীট খেতে হবে।ডি-পেতে হলে ডিমের কুসুম,সামূদিক মাছ,গরুর লিভার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন সকাল ১০-বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত ১৫-২০ মিনিট শরীরে রোদ লাগানো উচিত।এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হবে।
♦ কোভিড পজিটিভ রোগীদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা।পানি দেহের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখার পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং দেহে পুষ্টি উপাদান পরিবহনের জন্য অপরিহার্য।তাই,পানি কম পান করলে এই কাজ গুলো ব্যহত হয়।
♦ সুতরাং, আমরা সচেতন হলে পরিস্কারপরিছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিলে এবং যথাযথ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে কোভিড-১৯ এর মারাত্মক ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও ভালভাবে লড়তে পারব।
লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড
Comments Area