• পৃথিবী ব্যাপি করোনা মহামারীর কারণে সব মানুষই পুষ্টি বিষয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে।
• কারণ,বর্তমানে আমরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে যেখানে রোগ নিরাময়ের জন্য না আছে কোন পরীক্ষিত মেডিসিন না আছে ভ্যাক্সিন।
• অনেকটা,পরীক্ষামূলক ভাবে চলছে করোনার চিকিৎসা।
  যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি তাদের করোনা থেকে বেচে থাকার হার ও বেশি।
• আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
• তবে,যাদের ধারণা,পুষ্টিকর খাবার মানেই কেবল দামী খাবার তাদের ভুল ভাংগাতে আজ বলবো এমন এক পুষ্টিকর খাবারের উৎসের কথা যা আমাদের আশপাশেই বিপুল পরিমাণে রয়েছে।
• বলছিলাম,সজিনা গাছের কথা।
  প্রতি ১০০ গ্রাম সজিনাতে ক্যালরি রয়েছে ৬৪,শর্করা ৮.২৮ গ্রাম,ডায়াটারি ফাইবার২.০ গ্রাম,ফ্যাট ১.৪০ গ্রাম,প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম,ভিটামিন-এ ৩৭৮ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিন-বি১ রয়েছে ০.২৫৭ মিলিগ্রাম, বি২,০.৬৬০ মিলিগ্রাম, বি৩,২.২২০ মিলিগ্রাম, বি৫, ০.১২৫ মিলিগ্রাম,বি৯,১.২ মিলিগ্রাম,বি৯ বা ফোলেট রয়েছে ৪০ মাইক্রো গ্রাম,ভিটামিন-সি ১.৭ মিলিগ্রাম।ক্যালসিয়াম- ১৮৫ মিলিগ্রাম,আয়রন-৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম,জিংক ০.৬ মিলিগ্রাম। 
• এই গাছটির ফুল, ফল, বাকল,আঠা এবং পাতা কোন কিছুই ফেলনা নয়।আর,এই প্রতিটি উপাদানেরই রয়েছে বিস্ময়কর পুষ্টি গুন।সজিনা এবং সজিনার ফুল বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পাওয়া গেলেও গাছের পাতা কিন্তু সারা বছরই পাওয়া যায়।
• তাই,প্রথমেই জানাতে চাই সজিনা পাতার কিছু গুনাগুন।
• প্রতি গ্রাম সজিনা পাতার গুড়াতে রয়েছে প্লেন দইয়ের তুলনায় ৯ গুন বেশি প্রোটিন,গাজরের তুলনায় ১০ গুন বেশি ভিটামিন-এ, কলার তুলনায় ১৫ গুন বেশি পটাশিয়াম,দুধের তুলনায় ১৭ গুন বেশি ক্যালসিয়াম এবং পালংশাকের তুলনায় ২০ গুন বেশি আয়রন।সুতরাং,যারা নানা কারণে প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছেন না তারা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন সজিনা পাতা রাখুন খাদ্য তালিকায়।
• সজিনা পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায় এবং গুড়া করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়।সব্জি হিসাবে, চায়ের সাথে,স্যূপের সাথে কিংবা তরকারিতে ধনিয়াপাতার বিকল্প হিসাবে ও সজিনা পাতা ব্যবহার করা যায়।
• সজিনা পাতাতে গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিস রয়েছে যা আমাদের দেহের কোষ গুলোকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
• বর্তমানে অনেক নতুন মা আছেন যারা তাদের সদ্যজাত সন্তান বুকের দুধ পাচ্ছেন না বলে চিন্তায় আছেন তারা তাদের প্রতিদিনের খাবারে সজিনা পাতা বা এর গুড়া রাখতে পারেন।২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব ল্যাক্টেটিং মাকে প্রতিদিন ৩৫০ গ্রাম সজিনা পাতা খেতে দেয়া হয়েছে তাদের বুকের দুধের পরিমাণ অন্য ল্যাক্টেটিং মায়েদের তুলনায় বেশি ছিল।
• মানুষের শরীরের যে ৯ টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এই সজিনা পাতার মধ্যে বিদ্যমান।
• সজিনাতে উচ্চপরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা সাধারণ সর্দি, ফ্লু বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং বেশ কয়েকটি সাধারণ সংক্রমণ বন্ধ করে দেয়।
• সজিনার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য হাঁপানি, কাশি, ঘা এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে। 
• সাধারণ কাশি এবং অন্যান্য অসুস্থতা থেকে দ্রুত স্বস্তির জন্য এবং দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখার জন্য সজিনা পাতার স্যুপ খুব উপকারী।
• সজিনা পাতা রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করতে এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য  করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সজিনা পাতা খুব উপকারী।
• একই ভাবে সজিনার ডাটা ও ভীষণ পুষ্টিকর একটি সব্জি।
• এতে,ফাইবার,ভিটামিন-বি,সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
• সজিনার ডাটা রুচি বর্ধক একটি সব্জি।যাদের খাওয়ার প্রতি রুচি কম তারা এই সব্জিটি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
• হজমের সমস্যা দূর করতে ও সজিনার ডাটা বেশ উপকারী।এতে,থাকা ফাইবার এবং বি-ভিটামিন হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
• পাশাপাশি,সজনে ফুলে থাকা আইসোথিয়োকাইনেটস নামক এক অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি হজমের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
• এছাড়া,অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে সজনে ফুল সেদ্ধ করে খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• সুতরাং,অল্প দামে অধিক পুষ্টি পেতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সজিনা ডাঁটা,পাতা বা ফুল যেটিই হাতের কাছে  পাওয়া যায় যোগ করতে পারেন।
• সতর্কতাঃ সজিনা ডাঁটা,পাতা বা ফুল উপকারী হলেও এতে থাকা উপাদান "আলফা সিটেস্টেরল" গর্ভবতী মায়েদের জন্য গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।তাই, গর্ভাবস্থায় এই সব্জিটি খাওয়া উচিত নয়।

লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড